ড. মুহাম্মদ ইউনুস: ৮টি অজানা তথ্য যা আপনাকে নতুন দৃষ্টিকোণ দেবে
ড. মুহাম্মদ ইউনুস, ক্ষুদ্রঋণ ধারণার স্রষ্টা এবং নোবেল বিজয়ী, এমন একজন ব্যক্তি যার কাজ ও অর্জন বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তবে তার জীবনে এমন অনেক অজানা গল্প ও তথ্য আছে যা সাধারণ মানুষ জানে না। চলুন, তার জীবন সম্পর্কে এমন ৮টি কম পরিচিত তথ্য সম্পর্কে জেনে নিই।
১. ছেলেবেলার নাম ছিল ‘নুহু মিয়া’
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের পরিবার তাকে ছোটবেলায় ‘নুহু মিয়া’ বলে ডাকত। এই নামটি ছিল তার পরিবারের মধ্যে তার প্রতি ভালোবাসার এক বিশেষ চিহ্ন। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন বেশ চঞ্চল এবং দারুণ মেধাবী। তিনি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তার এই ডাকনামটি এখন হারিয়ে গেলেও, তা তার ছেলেবেলার মধুর স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।
২. কবিতা লেখার শখ ছিল
তরুণ বয়সে ড. ইউনুসের সাহিত্যপ্রেম ছিল প্রবল। তিনি একাধিক কবিতা লিখেছেন, যেগুলোর মধ্যে তার চিন্তা, দারিদ্র্যের প্রতি অনুভূতি এবং জীবনের গভীর উপলব্ধি প্রকাশ পেয়েছে। তার মতে, কবিতা লেখা তার সৃজনশীল চিন্তাকে শাণিত করেছে এবং জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে সহজভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করেছে। যদিও পরবর্তীতে তিনি অর্থনীতির জগতে প্রবেশ করেন, তার ভেতরের কবি কখনো হারিয়ে যায়নি।
৩. একজন সফল বিতার্কিক ছিলেন
চট্টগ্রাম কলেজে পড়ার সময় ড. ইউনুস বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন এবং বারবার বিজয়ী হতেন। তার যুক্তি দেওয়ার দক্ষতা এবং নিজের কথা স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতা তাকে সব সময় এগিয়ে রাখত। এই দক্ষতাগুলো পরে তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্রঋণের ধারণা প্রচারে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের মডেল উপস্থাপনে।
৪. গ্রামীণ ব্যাংক ছিল একটি ব্যতিক্রমী ধারণার পরীক্ষা
অনেকেই মনে করেন গ্রামীণ ব্যাংক বড় আকারে শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি শুরু হয়েছিল একটি ছোট্ট পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে, চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামের মাত্র ৪২ জন নারীর জন্য। তিনি নিজের পকেট থেকে ৮৫৬ টাকা ঋণ দিয়ে এই প্রকল্প শুরু করেন। পরীক্ষাটি সফল হওয়ার পর, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকে পরিণত হয়। আজ সেই ছোট উদ্যোগটি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
৫. শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন ছিল
ড. ইউনুসের ভেতরে একজন সৃজনশীল শিল্পীর বাস ছিল। তিনি পেইন্টিং এবং ভাস্কর্যে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। তরুণ অবস্থায় তিনি বেশ কয়েকটি আর্ট প্রজেক্টে অংশগ্রহণও করেছিলেন। তার মতে, সৃজনশীল চিন্তা মানুষকে নতুন ধারণা তৈরিতে সাহায্য করে, যা তার ক্ষুদ্রঋণ মডেলের মতো বড় ধারণার পেছনেও কাজ করেছে।
৬. যুক্তরাষ্ট্রে গৃহহীনদের জন্য কাজ করেছেন
১৯৭০-এর দশকে যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনা করতেন, তখন সেখানকার গৃহহীন মানুষের জন্য কাজ শুরু করেন। তিনি তাদের অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখেন, দরিদ্র মানুষদের একটু আর্থিক সহায়তা তাদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তার এই অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৭. জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতন উদ্যোগ
ড. ইউনুস শুধুমাত্র অর্থনীতি নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়েও বেশ সচেতন। তার ‘থ্রি জিরোস মডেল’-এর অন্যতম লক্ষ্য হলো নেট জিরো কার্বন ইমিশন। তিনি বিশ্বাস করেন, টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তিনি একাধিক পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে কাজ করেছেন, যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
৮. একাধিক সিনেমায় উঠে এসেছে তার কাজ
ড. ইউনুস এবং তার কাজ নিয়ে একাধিক ডকুমেন্টারি এবং সিনেমা নির্মিত হয়েছে, যা তার মডেল এবং দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়িয়েছে। “To Catch a Dollar” নামে একটি ডকুমেন্টারি আমেরিকার দরিদ্র মানুষদের জন্য তার ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের সাফল্য দেখিয়েছে। এ ছাড়া তার জীবন এবং কাজ নিয়ে লেখা বেশ কিছু বইও বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।